Was Carl Popper Right about Karl Marx? (in Bengali)

কার্ল পপার মার্কস সম্পর্কে সঠিক মূল্যায়ন করেছেন ? হ্যা বা না –

আমি কার্ল পপারের কিছু লিখা পড়েছি বিধায় তাঁর কাজ সম্পর্কে কিছু ধারনা হয়েছে। মার্ক্সের যারা সমালোচনা করেছেন তাদের মধ্যে কার্ল পপার অন্যতম। তাঁর কর্ম বিশ্লেষণ করলে এটা বলতেই হয় যে পপার সাহেব মার্কসের তত্ত্ব এর একজন সমজদার মানুষ। তিনি যতেস্ট পরিমানে কিছু ভালো কাজ করেছেন, তাঁর কর্মই বলে দেয় যে তিনি মার্ক্সের একজন বুঝনাদার ব্যাক্তি। তাঁর কথা গুলোকে ব্যাপক ভাবে গ্রহন করলে বলেতি হবে যে কোন ছাত্রের ভূল কাজের জন্য তাঁর শিক্ষক বা দার্শনিককে দায়ী করা সমীচীন নয়। তিনি উদাহরন দিয়ে বলেছেন এডলফ হিটলারের অপকর্মের জন্য ফ্রেডারিক নিতসেকে দায়ী করা চলে না । সত্যিকার ভাবে কোনটি সঠিক, আমরা হলফ করে বলতে পারি না । তিনি তাঁর বইয়ের প্রথম অংশটি বেশ চমৎকার ভাবেই সম্পন্ন করেছেন, এবং সেখানে মার্ক্সকে যথার্থ ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি সর্বনাশ করেছেন তাঁর বইয়ের দ্বিতীয় ভাগে। তিনি প্রথম দিকে যে সকল তত্ত্ব মার্কস থেকে উল্লেখ করেছেন তা কিন্তু শেষের দিকে তাঁর বর্ননার সাথেই মিলে না । একজন পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন যে তিনি মার্ক্সের ভিন্ন ধারার ও দুই রকমের তত্ত্ব অধ্যয়ন করছেন। তাঁর এই সকল কাজ দেখলে আমরা বলতেই পারি যে তিনি মার্ক্সবাদ বুঝেছেন, কিন্তু তিনি সমালোচনা করতে গিয়ে অসততার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ১৮০ ডিগ্রী কোন থেকে মার্ক্সকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে যা স্ট্যালিনের অপরাধকে ঢেকে ফেলে। তাই তাঁর কাজই বলে দেয় যে পপার মার্ক্সবাদের সমালোচনায় সত্যের বিবরণে অপলাপ করেছেন।

তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো, মার্ক্সবাদের সমালোচনায় কার্ল পপার কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথার্থ কথা ও বলেছেন। উদাহরন হিসাবে উল্লেখ্য যে, মার্ক্স বলেছিলেন উন্নত শিল্প বিপ্লবে অগ্রসর জাতি গুলোতেই আগে বিপ্লব হবে এরাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিবেন। তাঁরা ই সারা দুনিয়ায় বিপ্লবের বানী ছড়িয়ে দিবেন। কিন্তু আমরা ইতিহাসে দেখলাম, সেই সকল উন্নত দেশে বিপ্লব হয়নি। বরং উল্টো ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত, উন্নত শিল্পের অধিকারী দেশ জার্মানী ফ্যাসিবাদের দিকে এগোলো। দ্বিতীয়ত, অনুন্নত কতিপয় দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হলোঃ যেমন- রাশিয়া, চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, আলবেনিয়ায়। মার্ক্স তাঁর এই সম্পর্কীয় বক্তব্যে ভূল প্রমানিত হলেন।

যদি আপনি পপারের আরো কিছু লিখা পড়েন তবে দেখবেন(যেখানে অসততা নেই), তিনি মার্ক্সের যথাযথ সমালোচনা করেছেন। পপার এক দিকে যেমন মার্ক্সের সঠিক সমালোচনা করেছেন আবার অন্য দিকে মারাত্মক ভূল বক্তব্য হাজির করেছেনঃ তিনি লেনিন বা মাও কে অধ্যয়ন করেন নি। সেই কারনে মার্ক্সবাদের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি মারাত্মক ভূল করেছে, লেনিন ও মাওয়ের অবদানের জন্য বলা হয় মার্ক্সবাদের “দুই মাথা” । পপার দাবী করেন যে মার্ক্সবাদ কোন বিপ্লবী বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারেন নাই কেননা এটা কোন কোন ক্ষেত্রে ভূল প্রমানিত হয়েছে। আসলে ইহা একটি বিজ্ঞান কেননা এটা দুনিয়ায় নয়া বস্তুগত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পেরেছে এবং অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে।

“দ্রুপদী মার্কসবাদ” হলো পপারের বক্তবের সম্পূর্ন বিপরীত বিষয়, ব্যাপক অর্থে সমালোচনা করলেও মার্ক্সবাদ মিথ্যা হয়ে যায়নি। তবে কতিপয় ক্ষেত্র আছে যা আবার মার্ক্সবাদ উপযোক্ত জবাব ও দিতে পারেনি, সুতরাং বলতেই হয় পপার ও সঠিক। দ্রুপদি মার্ক্সবাদিরা পপারের উত্তর দিতে না পেরে লেনিনবাদ ও মাওবাদকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন। আদতে দ্রুপদি মার্ক্সবাদিরা মতান্দ্বতার শিকার। পপার সাহেব আসলে দ্রুপদি মার্ক্সবাদের বিশ্লেষণ করেছেন, তাই আমাদের বক্তব্য হলো মার্ক্সবাদ একটি বিজ্ঞান ইহা একটি ক্রমবিকশিত বিজ্ঞান, ইহা তথ্য উপাত্ত ও অভিজ্ঞতার নিরিখে নিজেকে প্রকাশিত ও বিকশিত করে থাকে।

লেনিন মার্ক্সের তত্ত্বকে উন্নত ও বিকশিত করেছেন যা পপারের আলোচনাকে নাকচ করে দেয়।

“… একটি জাতির শোষিত ও নিপিড়িত হওয়ার বিষয়টি পারস্পরিক ভাবে সম্পৃক্ত – বিশেষ করে যে সকল দেশ কতিপয় “শক্তিশালী” দেশের আওতায় উপনিবেশিক অবস্থায় রয়েছে, সেই সকল পছাতপদ জাতিতে ক্রমে “সভ্যতার” নামে পরগাছাবাদ সংক্রমনের প্রয়াস চলছে। রোমান প্রলেতারিয়ানদের শ্রমের উপর সেই দেশের সমাজ ঠিকে ছিলো । আর আধুনিক সমাজ ঠিকে আছে আধুনিক যুগের প্রলেতারিয়ানদের শ্রম ও সাধনার উপর। সিসমানদির পর্যবেক্ষনের উপর মার্কস সবিশেষ জোর দিয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ায় নানা ভাবে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশ সমূহের সুবিধা ভোগী শ্রেনী ও প্রলেতাটিয়েত শ্রেনী ঠিকে আছে সমগ্র বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন শ্রমজিবী মানুষের শ্রমে ও ঘামে”।

লেনিন এখানে পরিস্কার ভাবেই অভিজাত কর্মজীবীদের কথা বলেছেন। সাম্রাজ্যবাদী দেশ গুলোতে একটি বিশেষ শ্রম জীবী শ্রেনী আছে যারা অত্যন্ত উন্নত জীবন যাপন করতে পারছেন। তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই চায় চলমান ক্ষমতা কাঠামো ঠিকে থাক, তাতে তাঁরা উপকৃতই হচ্ছেন। তাদের বিপরীতে যারা বিপ্লবী তাঁরা বিনাশ হোক এটা তাদের অন্তরের কথা।

তিনি সোস্যাল ডেমোক্রেটদেরকে অভিজাত শ্রমজিবীদের দল হিসাবে বর্ননা করেছেন। যারা আরাম আয়েশের জীবনের জন্য বিপ্লবের পথ ছেড়ে দিয়েছেন । তত্ব পরিবর্তন করে ফেলেছেন। তাদের অবস্থানের সত্যতা প্রমানের জন্য বিপ্লব নয় – সংশোধনবাদের পথে চলেছেন। তাঁরা লেনিনের সময়ে সোস্যাল ডেমোক্রেট হিসাবে পরিচিত ছিলেন আর যাদের নেতা হলেন কার্ল কাউটস্কী…

“… তিনি “পুঁজিবাদের স্থর” হিসাবে সাম্রাজ্যবাদকে স্বীকার করেন নাই, তিনি “নীতি” হিসাবে বলেছেন ফাইনান্স পুঁজি “শিল্পের” দেশ গুলোকে “কৃষি” প্রধান দেশের সাথে সম্পৃক্ত করে দিবে। কাউটস্কী কৌশলগত ভাবে একটি মিথ্যা তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। আমারা ফাইনান্স পুঁজির কি দেখলাম তা কেবল কৃষি ভিত্তিক দেশ নয় সকল ধরনের দেশ সমূহকে সম্পৃক্ত করে দিয়েছে। কাউটস্কী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতি ত্যাগ করেছেন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অর্থনীতি ও বাদ দিয়ে এক ধরনের বুর্জোয়া সংশোধনবাদের পথ বেছে নিয়েছেন। যেমন তিনি “নিরস্ত্রীকরন”, “বিশেষ ধরনের সাম্রাজ্যবাদ” যা সত্যি অর্থহীন একটি বিষয়। তিনি এক্ ধরনের অলিক ঐক্যের কথা হাজির করেছেন”।

বিষয়টি কেন এত গুরুত্বপূর্ন ? ইহা কি সেই বার্নি শ্যান্ডার মতামতের মতই নয়? যিনি সর্বদাই নীতিগত পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন; উদার গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ ধরে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি কোন ভাবেই বিপ্লবের প্রত্যাশী নন। বার্নী স্যান্ডার কোন ভাবেই পুঁজিবাদের বিলুপ্তি কামনা করেন না । তিনি দেখতে চান “অধিকতর ন্যায় ভিত্তিক” আমেরিকা । তিনি আমেরিকায় পুঁজিবাদ বিনাশ হোক তা একেবারেই চান না । এখানে প্রলেতারিয়েত রাজ কায়েম হোক তা তিনি মোটেই পছন্দ করেন না । তিনি চান আমেরিকা বর্তমানে যেসকল সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে তা আরো অধিক মাত্রায় বাজায় থাকুক। বার্নি স্যান্ডার প্রচলিত ব্যবস্থায়ই মুক্তি চাইছেন। তিনি প্রত্যাশা করেন অ্যামেরিকার সাম্রাজ্যবাদ বহাল তবিয়তে জারি থাকুক।

অগনিত মার্কিন মার্ক্সবাদি বার্নির দিকে ছোটছেন। তাঁরা নিজেদেরকে উদারতাবাদি গণতান্ত্রিক হিসাবে গড়ে তোলতে তৎপর হয়েছেন যেমন হয়েছিলেন ২০০৮ সালে ওবামার জন্য। স্যন্ডার প্রতি সমর্থন তাদেরকে প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে দবিত করে যেমন লেনিনের সময়ে কাউতস্কির সমর্থক গন সোস্যাল ডেমুক্রেটদের প্রতি দাবিত হয়েছিলো। তাঁরা বলতে চায় সামাজিক একতা নষ্ট করার জন্য কোন প্রকার কাজ না করাই ভালো তা তে সামাজিক সংস্কার সহজ হবে; তারা সাম্রাজ্যবাদের ইস্যূটিকে পাত্তাই দিতে চাইছে না। স্যান্ডার সমর্থকগন বলেন সামরিকি করন কর এবং তা কে “যথাযথ ভাবে ব্যবহার” কর। এই ধরনের কথার আসলে কোন মূল্যই নেই। এই সকল বিষয় দেখে আমরা সহজেই বলতে পারি যে, বার্নি চায় সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ব চলতেই থাকুক। তাদের বক্তব্য আর লেনিনের সময়কার কাউটস্কির কর্মের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্যই নেই। “…দিয়েছে। কাউটস্কী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতি ত্যাগ করেছেন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অর্থনীতি ও বাদ দিয়ে এক ধরনের বুর্জোয়া সংশোধনবাদের পথ বেছে নিয়েছেন। যেমন তিনি “নিরস্ত্রীকরন”, “বিশেষ ধরনের সাম্রাজ্যবাদ” যা সত্যি অর্থহীন একটি বিষয়। তিনি এক্ ধরনের অলিক ঐক্যের কথা হাজির করেছেন”।

লেনিন ও মাওবাদ অনুসারে পপার সম্পূর্ন ভাবেই ভূল ভাবে মার্কসীয় তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। তৃতীয় বিশ্ববাদ যেমন ভাবে প্রমান করে যে প্রথম বিশ্ববাদি রাজনীতি ভূল ।

কার্ল পপার মার্ক্সবাদ বিষয়ে সাধারন ভাবে সঠিক কেনন না তিনি মার্ক্সের তত্ত্বগত অবদানকে গণনায় নেন নাই। যেমন প্রথম বিশ্ববাদিরা এই কারনেই ভূল যে তাঁরা লেনিন ও মাওয়ের তত্ত্বকে গ্রহন করেন নাই। তাঁরা তাদেরকে পছন্দ ও করেন না । তাঁরা কোন ভাবেই তৃতীয় বিশ্ববাদকে সমর্থন ও করেন না ।

আমি যখন পপারের কাজ গুলো পড়ছিলাম তখন মনে হয়েছে আজকের দুনিয়ায় এই গুলো কেবল নিরেট তত্ত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। ইহা মার্ক্সবাদের উন্নয়নে কোন প্রকার ভূমিকা রাখতে ও সক্ষম নয়।